মা বেঁচে থাকলে মনে হয় এমনই হতো!!
প্রত্যেকে সন্তানেরই মায়ের কোলে মাথা রেখে বড় হতে ইচ্ছে করে আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। কিন্তু ভাগ্য আমাকে ব্যতিক্রম এর কাতারে ফেলে দিয়েছে সেই ছোট বেলাতেই।
আমি পরিবারের বড় ছেলে আমার পরে আরও পাঁচ জন তার মধ্যে সবার ছোট ভাইয়ের বয়স ছিল মাত্র ছয় মাসের। এক কথায় কেউ কাউকে দেখার বয়স তখন পর্যন্ত কারোরই হয় নাই।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আমাকে মেনে নিতে হয়েছিল সেই ছোট বেলাতেই। বয়স তখন এ আর এমন কি হবে? সবে মাত্র সপ্তম শ্রেণিতে উঠেছি। হঠাৎই একদিন আমরা তিন ভাই, তিন বোনকে রেখে আমার মা সবাই কে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
এর মধ্যে মা যে মারা গেছেন ছোট তিন ভাই বোনের কিন্তু বুঝারই জ্ঞান হয়নি।
মা মারা যাওয়ার পর আমার ১০৫ ডিগ্রি জ্বর হয়েছিল। পাঁচ দিন প্রায় অচেতন ছিলাম। শুধুমাত্র এইটুকুই মনে আছে আমার কাছের যারা ছিল তারা আমাকে বলেছিল বাবারে কষ্ট করে পাঁচ টা দিন পাড় কর তারপর আল্লাহই রহমত দিবে। তার উপর আবার তুমি ছয় জনের মধ্যে সবার বড়। তোমাকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে তোমার ছোট ভাই বোনের দিকে তাকিয়ে । আল্লাহ তোমাকে ধৈর্য ধারণের সাহস যোগাবে।
ওনাদের কথা কিন্তু সেদিন সত্যি হয়েছিল। আল্লাহ আমাকে পৃথিবী সমান ধৈর্য দান করেছেন।
আমরা সবাই ছোট ছিলাম বলে আমার নানু নিজ হাতে আব্বাকে বিয়ে করালেন। বর্তমান মায়ের এক মেয়ে আছে।
আমার সৎ মা অসম্ভব ভাল ছিলেন এটা বুঝানোর জন্য একটি কথাই কিন্তু যথেষ্ট। আর তা হলো একজন কুমারী মেয়ে হিসেবে সেই দিন আমাদের তিন ভাই ও তিন বোন কে নিজের সন্তানের মতো বুকে টেনে নিয়েছিলেন আর কিন্তু ছাড়েন নি।
যার ফলশ্রুতিতে আমরা ভাই বোন সবাই আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভাল আছি।
সব কিছুর পরেও এক ধরনের চাপা কষ্ট কিন্তু থেকেই যায়।
আল্লাহর রহমতে আজ আমার চাপা কষ্ট আমার মেয়েকে পেয়ে কখন যে ভুলে গেছি টেরই পাইনি।
আমি আমার মেয়ের মাঝে আমার হারিয়ে যাওয়া মাকে খুঁজে পেয়েছি। সত্যিই মা বেঁচে থাকলে মনে হয় এমনই হতো।
ফারুক আহমেদ
ময়মনসিংহ।
No comments:
Post a Comment